স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। লাইফ স্টাইল ডিজিজ এর ভিতরে পড়ে ক্যান্সার, হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল। লাইফ স্টাইল ডিজিজ এর মূল কারণ ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি, অবৈজ্ঞানিক জীবনচার, মানসিক চাপ বা টেনশন। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত লাইফ স্টাইল ডিজিজ অ্যান্ড সায়েন্স অব লিভিং বিষয়ক সেমিনারে গত বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকাল ৫ টায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে লাইফ স্টাইল এক্সপার্ট জনাব ডা. মনিরুজ্জামান এসব তথ্য বিশ্লেষণ করেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আশিক মোসাদ্দিক, রেজিস্ট্রার সুরঞ্জিত মন্ডল, প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
জনাব ডা. মনিরুজ্জামান বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ‘লাইফ স্টাইল ডিজিজ এর সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত দুর্বল ইমিউন সিস্টেম। Homeostatic এর ভেতরে অন্যতম যারা ছিলেন, তারা লাইফস্টাইল ডিজিজ এর সাথে দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের সম্পর্ক পেয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলো- Dr. Dean Ornish, Dr. T Colin Campbell , Dr. Michael Greger, Dr. Herbert Beson, Dr. Joel fuhrman.’
সুস্থ কর্মময় দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রয়োজন, সুস্থ জীবন আচার। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকারভেদ আছে, মানসিক প্রশান্তি, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম, দমচর্চা, সঠিক খাদ্যাভাস। তিনি বলেন, ‘তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা বলেছেন, The purpose of our lives is to be happy. আমাদের জীবনের লক্ষ্য থাকা উচিত খুশি থাকা। আরে খুশি থাকার উপায় হচ্ছে inner peace আত্মার শান্তি। সত্যিকারের প্রশান্তির জন্য আমাদের হতে হবে ইতিবাচক, থাকতে হবে প্রোঅ্যাকটিভ দৃষ্টিভঙ্গি এবং করতে হবে মেডিটেশন। মানুষের অর্থ-সম্পত্তি থাকার পরেও সুখ খোঁজে। বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলের সকল সদস্য একজন ভারতের ধর্মগুরুর কাছে মেডিটেশন শিখেছিলেন। তারা একমাত্র মেডিটেশনেই সুখের সংজ্ঞা পেয়েছিলেন। বিশ্বের সব থেকে সুখী মানুষ Matthieu Richard. তিনি খুবই সাধারণ মানুষ। ১৫ বছর ধরে মেডিটেশন করেছেন। বিজ্ঞানীরা তার মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে অন্যান্য মানুষের থেকে আলাদা পেয়েছেন। এর অন্যতম কারণ মেডিটেশন। মস্তিষ্ক খুশি রাখতে মস্তিষ্কের কিছু কেমিক্যাল আছে যেগুলো ডিপ্রেশন এবং অন্যান্য হাইপারটেনশন এর কারণে বন্ধ হয়ে থাকে। এগুলোকে খুশির কেমিক্যাল বলে কেউ কেউ আখ্যায়িত করেন। যেমন, ডোপামিন, সেরোটোনিন, ইন্ডোরফিন, অক্সিটক্সিন। Professor Laurie Santos, Professor of phycology, Yale university একটি বিষয়ের উপরেই ক্লাস নেন, যে কিভাবে সুখী থাকতে হয় এবং তার ক্লাসে স্টুডেন্ট সংখ্যা সর্বাধিক। তিনি সবার কাছে প্রিয় একজন শিক্ষক।
ডা. মনিরুজ্জামান আরো বলেন, মানুষ যদি খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনে তবে ভালো থাকবে। যদি উদ্ভিদ খাবার ৯০% এবং ১০% প্রাণিজ খাবার গ্রহণ করি, আমরা সুস্থ থাকবো। আমাদের দেহের সুস্থতার সাথে সুখেরও একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে আর দেহের সুস্থতা আসবে সঠিক খাবার সেবন করলে। যেমন আমরা যদি মাছ-মাংসের খাবারের একটি তালিকা করি সেখানে দেখা যায়, দুই দিন ছোট মাছ, দুই দিন বড় মাছ একদিন মাংস এবং বাকি দুই দিন সবজি। রাতে মাছ মাংস না খাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে প্রতিদিন একটি করে ডিম খান। এই খাবারই হতে পারে ঔষধ আবার এই খাবারই হতে পারে বিষ। সুস্থ প্রাণবন্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটো কেমিক্যাল, পানি, হরমোন এনজাইম, অক্সিজেন, বায়ো ইলেকট্রিক্যাল অ্যানার্জি, লাইফ ফোর্স বা প্রাণশক্তি। এসবের যেকোনো একটির অভাবে আপনি হয়ে উঠতে পারেন, প্রাণহীন-উদ্যোমহীন অসুস্থ মানুষ। প্রাণিজ খাবার, পানি ও বাতাস থেকে যেগুলো পাওয়া যায়, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, পানি, অক্সিজেন। ফাইটো কেমিক্যাল, লাইফ ফোর্স প্রাণশক্তি পাওয়া যায় উদ্ভিদ খাবার থেকে।
খাবার প্রধানত তিন প্রকার। জীবন্ত খাবার, অর্ধমৃত খাবার, মৃত খাবার। জীবন্ত খাবার সালাদ, শসা, বীজ, বাদাম, ফল। এগুলাই সিদ্ধ করে খাওয়া হচ্ছে অর্ধমৃত খাবারের অন্তর্গত। আর একবারে ভেজে পুড়িয়ে তেল মসলা দিয়ে কালো করে খাবারের নাম মৃত খাবার। যেমন গরুর মাংস বেশি করে ভেজে খাওয়া । প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ ভাগ জীবন্ত খাবার খেতে হবে। শরীরের ক্ষারীয় অবস্থা বজায় রাখতে হবে। এই ক্ষারীয় অবস্থায় বজায় থাকে ব্যায়াম, মেডিটেশন, প্রণায়াম ও সঠিক খাবারের কারণে।
সব ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, লতাপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, সীম, ডাল, টক দই ইত্যাদি Alkali forming food. দুধ ডিম মাংস পনির, লেবু, কফি, লবণ, বার্গার, নুডুলস, চকলেট, স্যান্ডউইচ, বেভারেজ কোলড্রিংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাতরুটি Acid forming food.