বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের মক-ট্রায়াল অনুষ্ঠিত

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের মক-ট্রায়াল অনুষ্ঠিত

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত রাজশাহীর প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের শিক্ষার্থীদের অদম্য প্রচেষ্টায় গত ২৪শে নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় মক-ট্রায়াল।    

আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য বহুল প্রচলিত শিক্ষণীয় এই মক-ট্রায়ালে  সভাপতিত্ব করেন আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সম্মানিত কো-অরডিনেটর প্রফেসর আবু নাসের মোহাম্মাদ ওয়াহিদ । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোঃ আশিক মোসাদ্দিক, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মোঃ ফায়জার রহমান । এছাড়াও মক-ট্রায়াল এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল সম্মানিত দুইজন বিচারক এর উপস্থিতি, যেটা উপস্থিত সকলকে বিপুল অনুপ্রেরণা প্রদান করে বিশেষ করে তরুন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দকে। সম্মানিত বিচারকদ্বয়ের একজন ছিলেন মোঃ জিয়াউর রহমান, বিচারক, (জেলা ও দায়রা জজ), সাইবার ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী। অন্যজন ছিলেন মোঃ সেফাতুল্লাহ, সিনিওর সহকারী জজ (সদর), রাজশাহী।

মক ট্রায়ালে আদালতটা থাকে সাজানো, শিক্ষার্থীরা এখানে আইনজীবী ও সাক্ষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সর্বমোট ২ টি ক্রিমিনাল ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয় ৪ টি দল এর মধ্যে। ট্রায়াল শুরু হয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং প্রসিকিউশন ও আসামী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। এরপর চলতে থাকে পক্ষ্যদয়ের মধ্যে যুক্তিতর্ক যেখানে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দুইপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং বিশেষ করে জেরা করবার প্রক্রিয়া। এরপর শুরু হয় একের পর এক সাক্ষ্য প্রমাণ ও আইনি-যুক্তি স্থাপন এবং খণ্ডন। বিশেষ করে ট্রায়াল এর এই পর্যায়ে, তথা সমগ্র ট্রায়াল এই শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় নৈপুণ্যে বিচারক মহোদয় অত্যন্ত মুগ্ধ হন।জেরা ও জোবানবন্দী শেষে অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে পক্ষ্যদয়ের আইনজীবীদের মধ্যে চলতে থাকে শেষপর্যায়ের যুক্তিতর্ক এবং কাঙ্ক্ষিত বিচার প্রার্থনা।

প্রথম ট্রায়াল এর বিষয়বস্তু ছিল যৌতুক-বিরধ নিষ্পত্তি মামলা নিয়ে যেখানে বিজয়ী দল হিসেবে নির্বাচিত হয় আসামী পক্ষের আইনজীবীগণ এবং খালাস পেয়ে যায় আসামী। অপরদিকে, ‘খুন’ এর অভিযোগ নিয়ে চলছিল আরেকটি ট্রায়াল যেখানে রায় যায় প্রসিকিউশন এর পক্ষে এবং আসামী সাজা পায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের। 

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় মত বিনিময়, যেটি শুরু হয় মহামান্য অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত বিচারকদ্বয়ের হাত ধরে, যাদের উপস্থিতিতেই আলোকিত হয়েছিল মক-ট্রায়াল এর সন্ধ্যা। তাদের বক্তৃতায় ফুটে ওঠে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমণ্ডলীর জন্য তুমুল প্রশংসা এবং উৎসাহ। আর, একই সাথে তারা মনে করিয়েও দেন কঠোর পরিশ্রম এর কথা। আর, এটি বলাই বাহুল্য যে এমন ব্যক্তিত্যের উপস্থিতি পেয়ে আইন ও মানবাধিকার বিভাগসহ সমগ্র বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবার আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

বিচারকদ্বয়ের নান্দনিক বক্তৃতা শেষে এপর্যায়ে চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন মাননীয় কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মোঃ ফায়জার রহমান। তাঁর প্রধান তৃপ্তির জায়গা ছিল নবীন শিক্ষার্থীদের নজরকাড়া উপস্থাপনা, যেটা দেখে তিনি আইন ও মানবাধিকার বিভাগকে উন্নতির ধারা বজায় রাখতে তুমুল উৎসাহ দেন।

অতঃপর, প্রধান অতিথি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোঃ আশিক মসাদ্দিক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে মাননীয় উপ-উপাচার্য স্যার আইন জগতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। এরপর সকল দলের সামগ্রিক উপস্তাপনার প্রশংসা করা সহ, উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীদের কর্তব্যের কথাও।

মাননীয় কো-অর্ডিনেটর অত্যন্ত প্রাঞ্জল, তথ্যবহুল এবং উৎসাহপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি একজন শিল্পীর তুলির মত ক্যানভাসে তুলে ধরেন ‘মক-ট্রায়াল’ এর অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক আইনশিক্ষাই নয়, বরং বাস্তব জীবনে আইনের প্রয়োগভিত্তিক কার্যপ্রণালী হাতেকলমে শেখার জন্য মক-ট্রায়াল এর মঞ্চ এই ব্যাপক সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষার্থীদের বিপুল উৎসাহ দেন। এছাড়াও, কিভাবে জীবনের লক্ষ্য অর্জন করে সফল হওয়া যায়, সে বিষয়ে মাননীয় কো-অরডিনেটর স্যার সবাইকে বিপুলভাবে উৎসাহিত করেন।       

পরিশেষে, পুরষ্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ এই মক-ট্রায়াল। এমন অভিনব এবং বাস্তব-কেন্দ্রিক মক ট্রায়াল অনুষ্ঠান এই প্রথম আয়োজিত হল বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের হাত ধরে। যেখানে ছিল শিক্ষার্থীদের বাঁধনহারা গৌরব এবং আইন ও মানবাধিকার বিভাগের এই মঞ্চ জুড়ে ছিল স্বপ্ন ছোবার হাতছানি।