গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত রাজশাহীর প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের অদম্য প্রচেষ্টায় গত ৩১শে আগস্ট, ২০২৩, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় মক-ট্রায়াল। আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য বহুল প্রচলিত শিক্ষণীয় এই মক-ট্রায়ালে সভাপতিত্ব করেন আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সম্মানিত কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের সম্মানিত সদস্য, আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সাবেক কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ডঃ আনন্দ কুমার সাহা। এছাড়াও অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডঃ ফয়জার রহমান এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুরঞ্জিত মন্ডল।
এছাড়াও মক ট্রায়াল এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল নিম্ন আদালতের সম্মানিত দুইজন বিচারকের উপস্থিতি, যা উপস্থিত সকলকে বিপুল অনুপ্রেরণা প্রদান করে, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দকে। মক ট্রায়ালের সম্মানিত বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ জিয়াউর রহমান, বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ), সাইবার ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী এবং মোঃ সেফাতুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী জজ (সদর), রাজশাহী।
মক ট্রায়ালে আদালতটা থাকে সাজানো, শিক্ষার্থীরা এখানে আইনজীবী ও সাক্ষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। একটি ক্রিমিনাল ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয় দুটি দল এর মধ্যে। ট্রায়াল শুরু হয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। এরপর চলতে থাকে পক্ষ্যদ্বয়ের মধ্যে যুক্তিতর্ক যেখানে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দুইপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং বিশেষ করে জেরা করবার প্রক্রিয়া। এরপর শুরু হয় একের পর এক সাক্ষ্য প্রমাণ ও আইনি যুক্তি স্থাপন এবং খণ্ডন। বিশেষ করে ট্রায়ালের এ পর্যায়ে, তথা সমগ্র ট্রায়াল এই শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় নৈপুণ্যে বিচারক মহোদয় অত্যন্ত মুগ্ধ হন। জেরা ও জবানবন্দী শেষে অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে পক্ষ্যদ্বয়ের আইনজীবীদের মধ্যে চলতে থাকে শেষ পর্যায়ের যুক্তিতর্ক এবং কাঙ্খিত বিচার প্রার্থনা।
ট্রায়ালের বিষয়বস্তু ছিল একটি খুনের মামলা, যেখানে বিজয়ী দল হিসেবে নির্বাচিত হন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীগণ এবং ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয় আসামী। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় মতবিনিময়, যেটি শুরু হয় মহামান্য অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত বিচারকদ্বয়ের হাত ধরে, যাদের উপস্থিতিতেই আলোকিত হয়েছিলো মক-ট্রায়ালের আয়োজন। তাদের বক্তৃতায় ফুটে ওঠে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমন্ডলীর জন্য তুমুল প্রশংসা এবং উৎসাহ। আর একই সাথে তারা মনে করিয়েও দেন কঠোর পরিশ্রম এর কথা। আর এটি বলাই বাহুল্য যে এমন ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি পেয়ে আইন ও মানবাধিকার বিভাগসহ সমগ্র বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবার আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
বিচারকদ্বয়ের নান্দনিক বক্তৃতা শেষে এ পর্যায়ে চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. ফয়জার রহমান। তার বক্তৃতায় তিনি আগামী দিনের বিচারাঙ্গনে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। এছাড়াও আইন ও মানবাধিকার বিভাগকে উন্নতির ধারা বজায় রাখতে তুমুল উৎসাহ দেন। এরপরে বক্তব্য রাখেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা। তিনি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্ব ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার স্মৃতি স্মরণ করে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করবার ও উপস্হিত থাকবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অতঃপর প্রধান অতিথি, বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের মাননীয় সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে মক ট্রায়ালের বিভিন্ন সেশন নিয়ে মতামত প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে আরো মক ট্রায়ালের আয়োজন করতে উৎসাহ প্রদান করেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। মক ট্রায়ালে অতীতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বপূর্ণ বিজয় তুলে ধরেন। পরিশেষে শোকাবহ আগস্টের স্মৃতি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু ও তার স্বজনদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তারপর আইন ও মানবাধিকার বিভাগের কো অর্ডিনেটর প্রফেসর আবু নাসের মোঃ ওয়াহিদ, অত্যন্ত প্রাঞ্জল তথ্যবহুল এবং উৎসাহপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি একজন শিপ্লীর তুলির মতো ক্যানভাসে তুলে ধরেন মক-ট্রায়ালের অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক আইন শিক্ষাই নয় বরং বাস্তব জীবনে আইনের প্রয়োগভিত্তিক কার্যপ্রণালী হাতেকলমে শেখার জন্য মক ট্রায়াল এর মঞ্চ এই ব্যাপক সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষার্থীদের বিপুল উৎসাহ দেন। এছাড়াও, কিভাবে জীবনের লক্ষ্য অর্জন করে সফল হওয়া যায়, সে বিষয়ে কো-অর্ডিনেটর স্যার সবাইকে বিপুলভাবে উৎসাহিত করেন।
পরিশেষে, পুরষ্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ এই মক-ট্রায়াল। সেরা পারফর্মেন্সের জন্য পুরস্কৃত হন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী রায়হান ফেরদৌস ও সুমন আলী। এমন অভিনব ও বাস্তব কেন্দ্রিক মক-ট্রায়াল অনুষ্ঠান এইবার তৃতীয়বার এর মতো আয়োজিত হলো বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের হাত ধরে। যেখানে ছিলো শিক্ষার্থীদের বাঁধনহারা গৌরব এবং আইন ও মানবাধিকার বিভাগের এই মঞ্চ জুড়ে ছিলো স্বপ্ন ছোবার হাতছানি।