স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের মক-ট্রায়াল অনুষ্ঠিত

স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের মক-ট্রায়াল অনুষ্ঠিত

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত রাজশাহীর প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের শিক্ষার্থীদের অদম্য প্রচেষ্টায় গত ২৬শে নভেম্বর ২০২৩, রবিবার অনুষ্ঠিত হয় মক-ট্রায়াল।  আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য বহুল প্রচলিত শিক্ষণীয় এই মক-ট্রায়ালে  সভাপতিত্ব করেন আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সম্মানিত কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর আবু নাসের মোহাম্মাদ ওয়াহিদ । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা। এছাড়াও মক-ট্রায়াল এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল সম্মানিত দুইজন বিচারক এর উপস্থিতি, যেটা উপস্থিত সকলকে বিপুল অনুপ্রেরণা প্রদান করে বিশেষ করে তরুন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দকে। সম্মানিত বিচারকদ্বয়ের একজন ছিলেন মোঃ জিয়াউর রহমান, বিচারক, (জেলা ও দায়রা জজ), সাইবার ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী। অন্যজন ছিলেন মোঃ সেফাতুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী জজ (সদর), রাজশাহী।

 

মক ট্রায়ালে আদালতটা ছিলো সাজানো, শিক্ষার্থীরা এখানে আইনজীবী ও সাক্ষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এখানে একটি ক্রিমিনাল ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয় ২ টি দল এর মধ্যে। ট্রায়াল শুরু হয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং প্রসিকিউশন ও আসামী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। এরপর চলতে থাকে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে যুক্তিতর্ক যেখানে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দুইপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং বিশেষ করে জেরা করবার প্রক্রিয়া। এরপর শুরু হয় একের পর এক সাক্ষ্য প্রমাণ ও আইনি-যুক্তি স্থাপন এবং খণ্ডন। বিশেষ করে ট্রায়াল এর এই পর্যায়ে, তথা সমগ্র ট্রায়াল এই শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় নৈপুণ্যে বিচারক মহোদয় অত্যন্ত মুগ্ধ হন। জেরা ও জবানবন্দী শেষে অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে পক্ষদ্বয়ের আইনজীবীদের মধ্যে চলতে থাকে শেষপর্যায়ের যুক্তিতর্ক এবং কাঙ্ক্ষিত বিচার প্রার্থনা। আজকের ট্রায়াল এর বিষয়বস্তু ছিল মাদকের কারণে খুন,যেখানে উভয়পক্ষ তাদের পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন আইনি বিষয় তুলে আনে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় মত বিনিময়, যেটি শুরু হয় মহামান্য অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত বিচারকদ্বয়ের হাত ধরে, যাদের উপস্থিতিতেই আলোকিত হয়েছিল মক-ট্রায়াল এর বিকেল। তাদের বক্তৃতায় ফুটে ওঠে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমণ্ডলীর জন্য তুমুল প্রশংসা এবং উৎসাহ। আর, একই সাথে তারা মনে করিয়েও দেন কঠোর পরিশ্রম এর কথা। আর, এটি বলাই বাহুল্য যে এমন ব্যক্তিত্যের উপস্থিতি পেয়ে আইন ও মানবাধিকার বিভাগসহ সমগ্র বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবার আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

এছাড়াও বিচারকদ্বয়ের নান্দনিক বক্তৃতায় তারা নিজেদের কিছু চমৎকার  অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তাদের প্রশংসার জায়গা ছিল নবীন শিক্ষার্থীদের নজরকাড়া উপস্থাপনা, যেটা দেখে তিনি আইন ও মানবাধিকার বিভাগকে উন্নতির ধারা বজায় রাখতে তুমুল উৎসাহ দেন।

অতঃপর, প্রধান অতিথি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা স্যার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে মাননীয় উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আইনের বিষয়গুলো তুলে ধরার ভূয়সী প্রশংসা করেন।এরপর সকল দলের সামগ্রিক উপস্হাপনার প্রশংসা করা সহ, উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রমের কথা। এছাড়াও তিনি উপস্থিত বিচারকদের শিক্ষামূলক উপদেশ প্রদান ও তাদের মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

মাননীয় কো-অর্ডিনেটর অত্যন্ত প্রাঞ্জল, তথ্যবহুল এবং উৎসাহপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি একজন শিল্পীর তুলির মত ক্যানভাসে তুলে ধরেন ‘মক-ট্রায়াল’ এর অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক আইনশিক্ষাই নয়, বরং বাস্তব জীবনে আইনের প্রয়োগভিত্তিক কার্যপ্রণালী হাতেকলমে শেখার জন্য মক-ট্রায়াল এর মঞ্চ এই ব্যাপক সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষার্থীদের বিপুল উৎসাহ দেন। এছাড়াও,বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্হায়ী মক ট্রায়াল রুম তৈরীর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। আগামী মক ট্রায়াল সেশন স্হায়ী মক ট্রায়াল রুমে অনুষ্ঠিত করার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন কো-অর্ডিনেটর স্যার।  

পরিশেষে, পুরষ্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ এই মক-ট্রায়াল। বেস্ট রোল প্লেয়ার হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় মোছাঃ ফাতিমা খাতুন এবং বেস্ট এডভোকেট হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় জান্নাতুন নাঈম জুঁইকে। এমন অভিনব এবং বাস্তব-কেন্দ্রিক মক ট্রায়াল অনুষ্ঠান আয়োজিত হল বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আইন ও মানবাধিকার বিভাগের হাত ধরে। যেখানে ছিল শিক্ষার্থীদের বাঁধনহারা গৌরব এবং আইন ও মানবাধিকার বিভাগের এই মঞ্চ জুড়ে ছিল স্বপ্ন ছোবার হাতছানি।