বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উদযাপন

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উদযাপন

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। যথাযথ মর্যাদা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সূর্যোদয়ের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা, স্বাধীনতা সংগ্রামে সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের স্মরণে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিবসটির উদযাপন শুরু হয়। এরপর সকাল ৯টায় বাসযোগে একটি বিজয় র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ফিরে আসে। পরে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহার নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হতে যাত্রা শুরু করে ক্যাম্পাসের অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল মিফতার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা। প্রধান অতিথি ও আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চৌধুরী জুলফিকার মতিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. ফয়জার রহমান।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে বক্তব্যে প্রধান অতিথি অধ্যাপক চৌধুরী জুলফিকার মতিন বলেন, ‘আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিশ্ব মানচিত্রে লাল—সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যে সব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ। আর এ অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। এর জন্য বাঙালি জাতির ছিল সুদীর্ঘ তপস্যা ও সাধনা। এ সাধনার কান্ডারি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আগামীর পথচলা হতে হবে সুগম। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে এবং দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ফয়জার রহমান বলেন, ‘আমরা বিজয় পেয়েছি, আমাদের বিজয় রক্ষা করতে হবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে আরো জানতে হবে। স্বাধীনতাকে ধারণ করে দক্ষ সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে বর্তমান প্রজন্মকে তাহলেই সোানার বাংলা তৈরি হবে।

শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে সভাপতির বক্তব্যে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘স্বাধীনতায় প্রাণ দিয়েছেন সকল বীর সন্তানের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। ১৯৪৭ সাল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার সংগ্রাম শুরু হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। বর্তমান প্রজন্মকে ১৯৭১—এর চেতনায় উজ্জীবিত করতে হবে।’ এছাড়াও তিনি অতিথি, আয়োজক কমিটি ও উপস্থিত সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের কো—অর্ডিনেটর শাতিল সিরাজ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. হাবিবুল্লাহ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, কো—অর্ডিনেটরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্র—ছাত্রীবৃন্দ।

আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করে।