১৪৩১ থেকে নতুন আরও একটি বছর ১৪৩২, শুধু একটি ক্যালেন্ডার বদলের দিন নয়, বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই দিনটিকে ঘিরে থাকে আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও বর্ণিলতা। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, কমিউনিকেশ অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগও পিছিয়ে থাকেনি এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবে। বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়ে উঠেছিল আরও রঙিন, আরও প্রাণবন্ত।
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত। রঙিন পোশাকে সজ্জিত শিক্ষার্থীরা হাতে হাতে শোভাযাত্রার ব্যানার ও ফেস্টুন-সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক বর্ণিল দৃশ্যের। শোভাযাত্রা শেষে শিক্ষার্থীরা হাজির হন নিজ হাতে সাজানো স্টলে। নববর্ষের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে স্টলে ছিলো বাহারি খাবারের সমারোহ-পান্তা ভাত আর মাছ তো ছিলই, সঙ্গে ছিল পিঠা, পায়েস, মিষ্টি, নানা রকম ভর্তা এবং পুডিং। খাবারের ঘ্রাণ আর রঙের বাহারে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছিল। নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করে শিক্ষার্থীরা উদযাপনকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, বর্ষবরণের আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন দিনটিকে ঘিরে। বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক কারুকাজ দিয়ে সাজানো হয় স্টল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় আয়োজনে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় আলপনা অঙ্কন, গেট সাজানো এবং ফটো বুথ তৈরিতে। রঙ-তুলি হাতে নিয়ে তাঁরা যেন শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন এই উৎসবের।
বিভাগের কো-অর্ডিনেটর শাতিল সিরাজ বলেন, সাংবাদিকতা বিভাগ শুধু একাডেমিক পড়াশোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতির চর্চাও করে সমান উৎসাহে। এই আয়োজন তারই প্রমাণ। আমি গর্বিত আমাদের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ, সৃজনশীলতা এবং অংশগ্রহণ দেখে। এই উৎসব নিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছিল দারুণ উৎসাহ ও অনুভূতি। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া জামান বলেন, পহেলা বৈশাখ আমার জন্য শুধু উৎসব নয়, এটি নিজেকে প্রকাশ করার, আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করার একটি মাধ্যম। আমরা নিজেরা সাজিয়েছি স্টল, নিজেরা তৈরি করেছি খাবার। এটা এক অন্যরকম আনন্দ। একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান। তিনি কবিতার ছন্দে বলেন, নববর্ষের নব প্রতিশ্রুতি, আনো মনেতে শুভ দৃপ্তি। আলোক ছড়াও নতুন দিনে,পহেলা বৈশাখ থাকুক চিরদিনে! আজ শোভাযাত্রার সময় মনে হচ্ছিল আমরা সবাই একসঙ্গে একটি রঙিন স্বপ্নের ভেতর হাঁটছি। শিক্ষক ও বড়-ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে এমন একটা আয়োজন করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।
পুরো আয়োজন জুড়ে দেখা গেছে এক অনন্য একাত্মতা। বিভাগের শিক্ষক, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল দারুণ সমন্বয় ও সহযোগিতা। সবাই যেন মিলেমিশে তৈরি করছিলেন এক প্রাণবন্ত বৈশাখী চিত্র। এভাবেই বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, কমিউনিকেশ অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানিয়েছে এক অপরূপ আয়োজনে। শুধু উৎসব নয়, এই দিনটি হয়ে উঠেছিল একান্তভাবে নিজেদের সংস্কৃতিকে ভালোবাসার, একে আরও গভীরভাবে জানার ও ধারণ করার এক উৎস।