বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী

মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

রবিবার (২৬ মার্চ) সকাল ১০ টায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. ওসমান গনি তালুকদারের নেতৃত্বে স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক হতে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। পরে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ফিতা কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

২৬ শে মার্চকে স্বরণ করে ২৬ টি আলোকচিত্রের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশকে চিনিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালির অধিকার ফিরিয়ে এনেছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে দেশ স্বাধীন পর্যন্ত তিনি নানা স্লোগানে আর প্রতিবাদে উজ্জীবিত করেছিলেন বাঙ্গালি জাতিকে। মুক্ত বাংলাদেশ দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমাদের দেশের কথা।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতা পরবর্তী যে পরিবর্তন চাই, সেটা আগে নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। নিজেকে পরিবর্তন করতে পারলেই কাঙিক্ষত পরিবর্তন অর্জন সম্ভব হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আশিক মোসাদ্দিক বলেন, ‘ভয়াল ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা শুরু করেছিল তা ইতিহাসে এক জঘন্যতম অধ্যায়। বিভীষিকাময় সেই দিনটিকে গণহত্যা দিবস করার জন্য যে দাবি উঠেছে তার প্রতি আমরা সমর্থন জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইতিহাসে নজির আমরা মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তলাবিহীন দেশটিতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে আমরা এগিয়ে চলেছি।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ফয়জার রহমান বলেন, ‘আমরা স্বাধীন হয়েছি, আমাদের মুক্তচিন্তার অধিকারীও হতে হবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে আরো বেশি জানতে হবে। স্বাধীনতাকে ধারণ করে দক্ষ সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে বর্তমান প্রজন্মকে তাহলেই সোনার বাংলা তৈরি হবে।

শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. ওসমান গনি তালুকদার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর কোন দেশে ঘটেনি। বাঙ্গালি জাতির অগাধ দেশ প্রেমের ফলে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।’ এছাড়াও তিনি বক্তব্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থনীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আজকে বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি তা স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে শুরু হয়েছিলো। সে সময় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের ইতিহাস গড়েছিলো। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা আরো আগে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করতাম।

এছাড়াও বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রচালনা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ মুত্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুরঞ্জিত মন্ডল, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, কো-অর্ডিনেটর, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ।